শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

চাঁদ দেখাতেই বন্দী যাদের ঈদেঁর খুশি….

রাজু আহমেদ:

ব্রাজিল, আর্জেটিনা কিংবা বিশ্বফুটবলের বৃহত্তম আসরে অংশগ্রহনকারী, যাদের পতাকা পতপত করে বাংলার আকাশে উড়ছে, সেসকল দেশের একটি মধ্য আকৃতির পাতাকার দাম কত হবে? ঠিক জানিনা, তবে এটা জানি অনাথ আশ্রমে এতিম পরিচয়ে বেড়ে ওঠা একটি পাঁচ-ছয় বছরের ফুটফুটে শিশুর মুখে স্বর্গীয় হাসি ফোটাতে পতাকার দামের চেয়ে খুব কম টাকার প্রয়োজন। তবে অভাব কেবল মানবিকতার মানসিকতায়। ফুটপাতে বেড়ে ওঠা কিংবা বস্তির বস্ত্রহীন, আঁধার গলির টোকাই নতুবা গ্রাম্য ছিন্নবস্ত্রের যে শিশুরা কেবল চাঁদকে দেখেই তাদের ইদের খুশি সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হয় তাদের শরীরে নতুন কাপড় পড়িয়ে দেয়ার যে মানবিক দায়িত্ব সে দায়িত্ব ফুটবল বিশ্বকাপের কোন দলের অন্ধ সমর্থক হয়ে হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে বিশাল লম্বা লম্বা পতাকা উড়ানোর চেয়ে আরও বেশি মহান, আরও গৌরবের ।

রাজধানী, দেশের বিভাগীয় শহর এমনকি প্রত্যন্ত মফস্বলে ভিনদেশী পাতাকার যে বাহারি প্রদর্শনী তা ফুটবল প্রেমী ভক্তদের উদযাপনের উল্লাস হিসেবে খুব বেশি আপত্তিকর নয় কিন্তু আসন্ন ইদে যে সেকল অসহায় বিশেষ করে ইয়াতিমখানায় লালিত শিশুদের নতুন কাপড় জুটবে না তাদের সাহায্য না করে পতাকার উল্লাস নিঃসন্দেহে প্রশংসার কাজ নয়। জাতি হিসেবে আমাদের অনেক দুর্ণাম আছে। ব্রাজিল কিংবা আর্জেটিনায় তাদের ফুটবল নিয়ে যে মাতামাতি নাই তার চেয়ে বেশি মাতামাতি আমাদের। দেশের চলমান ঘৃণ্য রাজনৈতিক পরিস্থিতির চেয়েও বিভিন্ন দলের সমর্থকদের বাড়াবাড়ি, অশ্লীল আক্রমন ঘৃণ্যতায় আরও নিম্নতর। এমনকি কোন দলের সমর্থনের অন্ধত্ব এমন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যার কারনে সেসকল দেশের পতাকা উড়াতে গিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক তথা আমাদের জাতীয় পতাকার সাংবিধানিক বিধানের অবমাননা করা হচ্ছে। ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ হিসেবে মানুষের মনে প্রশান্তির খোড়াক যোগায় বটে কিন্তু যখন কোন ব্যাপারে সীমালঙ্গন করা হয় তখন তা জ্ঞানহীন পাগলামি হিসেবে বিবেচিত হয়।

একটা কেন, কোন দলের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সামর্থ অনুযায়ী একাধিক পতাকা উড়ালেও তাতে বাঁধা দেয়ার নৈতিক অধিকার কারো নাই কিন্তু মনুষ্যত্বের দাবী হিসেবে আমাদের আশ-পাশের মানুষের মুখে সাধ্যমত হাসি ফোটানোর দায়িত্ব লওয়া কিংবা জাগ্রত হওয়া বোধহয় সর্বাগ্রে জরুরী। যে কাপড়ে বিদেশের পতাকা উড়ানো হবে সেই কাপড়টুকু শিশুদের জামার আকৃতি দিয়ে হাতের নাগালের একজন বস্ত্রহীন শিশুকে আসন্ন ইদে উপহার দিন, দেখবেন সে মুখে যে অমলিন হাসি ফুটবে তা কোটি টাকায়ও ক্রয়াতীত। আর কোন দলের প্রতি যদি শুভ কামনা থাকে, কারো সাফল্য আকাঙ্ক্ষিত হয় তবে শুধু পাতাকা উড়িয়ে নয় বরং ভিন্ন কোন উপায়ে তাদের মঙ্গলের জন্য প্রার্থণা করুন। নিঃসন্দেহে মহৎ কোন কাজে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করার চেয়ে মঙ্গল প্রার্থণা আর হয় না। আসন্ন ইদ উপলক্ষে যদি সামর্থ অনুযায়ী দু’চারজন বস্ত্রহীন কিংবা ছিন্নবস্ত্র শিশুকে নতুন কাপড় কিনে দান করা হয় তবে আপনার মনের মধ্যেও প্রশান্তির চাঁদ কোমল-সিন্ধ আলোর ফোঁয়ারা ছোটাবে। ইদ উদযাপনের সামর্থ নাই এমন পরিবারকে দু’প্যাকেট সেমাই আর সেরখানেক চিনির ব্যবস্থা করে দিন। নিশ্চয়ই জানবেন, ভিনদেশী পতাকা উড়ানোর মধ্যে সামান্যতম কৃতিত্ব নেই বরং সেটা অপচয় হিসেবে বিবেচিত হবে যদি আপনার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও গরীব অসহায়ের দিকে সহায়তার হাত বর্ধিত না করেন।

স্বদেশ থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শিশু প্রায় খাদ্যহীন, অর্ধ বস্ত্রহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে । হয়তো গত ইদেও তারা তাদের জন্মভূমিতে মা-বাবার কাছে রাজপুত্র-রাজকন্যার হালতে ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তারা আমাদের দেশে আশ্রিত, আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রায় উপেক্ষিত। ইদ উপলক্ষে তাদের জন্য কিছু করা আমাদের সামনে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে উপস্থিত হয়েছে । সামর্থবানদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগ্রহনে বাংলাদেশের ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের সীমানায় যারা কষ্টে আছে তাদের কষ্ট সামান্য হলেও লাঘব করতে আমাদের উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক। এ দায় মনুষ্যত্বের দায়। যেহেতু সবার বিবেক আছে কাজেই সিদ্ধান্তও যার যার উপর ছেড়ে দিচ্ছি। কে শুধু পতাকা উড়াবে আর কে পতাকার টাকায় গরীব-অসহায়ের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াবেন তার সিদ্ধান্ত বিবেকপ্রসূত উপায়ে নিন । তবে সময় বড় স্বার্থপর। হয়তো রোহিঙ্গারা গত ইদের ভাবতেই পারেনি এই ইদে তাদের এমন দুর্দিন আসবে। কতোক্ষণ কার সামর্থ্ থাকে আর কখন কে সামর্থ হারায় তার নির্ধারক শক্তি বোধহয় অসীম ক্ষমতার মালিক।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com